উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চড়িতাবাড়ি বুড়িরদীঘি হয়ে বামনের বাসা যাতায়তের রাস্তায় পড়ে সতিনদী সাগরঘাট। সাগরঘাটে নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় করে নদী পার হতে হয় এখানকার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। নদীর উভয় প্রান্তে রয়েছে বাজার, স্কুলসহ নানান সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ পথে প্রতিদিন যাতায়ত করেন কয়েক হাজার মানুষ। আর এ কারণেই জনবহুল এ পথের সাগরঘাট এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই একটি একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় সকল জনপ্রতিনিধি এই এলাকায় এসে সাগরঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সরকারের পালাবদল চলতে থাকলেও এখনও জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাননি স্থানীয়রা।
এদিকে, সেতু নির্মাণ না হলেও কয়েক বছর আগেই সাগরঘাটের উভয় প্রান্তের সড়ক পাকা করেছে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। কিন্তু সেতু না থাকায় এ সড়কের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, কমলাবাড়ি এলাকা সবজির জন্য বেশ পরিচিত। এ এলাকার সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে বিক্রি হয়। সাগরঘাটে সেতু না থাকায় পরিবহন সমস্যার কারণে এখানকার চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন না।
এছাড়া সেতুর অভাবে বামনের বাসা গ্রামের লোকদের কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ বা আদিতমারী উপজেলা পরিষদ যেতে ১০/১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। একইভাবে চন্ডিমারী চরিতাবাড়ি এলাকার মানুষদের বামনের বাসা হয়ে হাজিগঞ্জ বা কালীগঞ্জ উপজেলার এতিহ্যবাহি শিয়ালখোয়ার হাট যেতে ৮/১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। যার কারণে সময় ও অর্থে উভয়ই অপচয় হয়।
সাগরঘাট এলাকার উভয় প্রান্তে রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নদী পার হতে হয় কলাগাছের ভেলায় বা নৌকায় করে।
চাঁন মিয়া ও হেলাল উদ্দিন নামে স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সাগরঘাট পার হয়ে স্কুলে যেতে চায় না। আমাদের চাষ করা সবজি সারা দেশের বাজারে বিক্রি হয়। অনেক কষ্ট করে ভেলা বা নৌকায় করে এসব সবজি পার করতে হয়।
বুড়িরদীঘি এলাকার বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘ভোটের সময় সবাই এসে সেতু করার কথা বলে ভোট নেন। ভোট শেষে আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। সরকারি লোকজন মাঝে মধ্যে আসেন এবং মাপ দিয়ে বালু নিয়ে চলে যান। তারাও বলেন সেতু হবে, কিন্তু সেতু আর হয় না।’
শিয়ালখোয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, পাবনাপাড়া, ময়নাচওড়া, বেলতলি, বামনের বাসা এলাকার শিক্ষার্থীরা সাগরঘাট পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। এসব গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা বেশিরভাগ সময় দেরিতে বা পানিতে ভিজে বিদ্যালয়ে আসে। দুর্ভোগ লাঘবে সাগরঘাট সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা প্রয়োজন।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, ‘সাগরঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বেও নকশা পাঠানো হয়েছে। সেই ফাইলটি নষ্ট হওয়ায় আমি যোগদানের পরপরই প্রধান কার্যালয় থেকে এ সেতুর ফাইল চাওয়া হলে নতুন করে ৪৮ মিটারের সেুর নকশা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনসহ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই সাগরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’